আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফখরুল

0
271

খবর৭১ঃআমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদে বিশ্বাস করি না। এ বিষয়ে আমাদের নিয়ে ভারতের ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। এটা পুরোপুরি মিথ্যা ধারণা যে আমরা ভারতবিরোধী। এটা আওয়ামী লীগের সৃষ্ট অপপ্রচারের অংশ।

ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা দেশের বাইরে ভারতের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ চেয়েছিলাম। তিনবার দেখা করেছি।

তিনি বলেন, ভারতীয় কূটনীতিকরা সাক্ষাৎ করতে তেমন আগ্রহী নন বলে মনে হয়েছে। সম্ভবত তারা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরাগভাজন হতে চাননি।

সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য, অবসর সময়ের ভালো লাগার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছি। আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১২ সালে দিল্লি সফর করেন। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম, পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার (খালেদা জিয়া) খুবই সফল বৈঠক হয়েছিল। তবে এরপর আর কিছু ঘটেনি। আর কোনো ফলোআপ নেই। আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ বছরের আগস্টে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে ব্যাংককে বৈঠকের দিন ঠিক করার চেষ্টা করেছি। তবে ভারতীয় পক্ষ এড়িয়ে গেছে।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো নির্বাচনী প্রচার নেই। এটা সন্ত্রাসের রাজত্ব, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের।’

ক্ষমতাসীনরা কীভাবে পুলিশকে ব্যবহার করছে এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভয়াবহ অবস্থা’। আমার স্ত্রী ও ৩২ বছর বয়সী শিক্ষক মেয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পেড়েছেন। আমি ভাবতেও পারিনি এমন পরিস্থিতি হতে পারে।

নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আগে খালেদা জিয়ার অনুমতি নিয়েছি। তারেক রহমানের সঙ্গেও পরামর্শ করেছি।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির জোটের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামায়াত বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন করা হলে আমি বলি, দেখুন, বিএনপি জামায়াত নয়। বিএনপি মৌলবাদে বিশ্বাস করে না। জামায়াতের জন্য আমাদের কোনো মোহ নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য একটি কৌশলগত ঐক্য। তাদের সঙ্গে থাকার কারণে অন্তত ৫০টি আসনে সুবিধা পাওয়া যাবে। আমাদের ছাড়া তাদের মাত্র তিনটি আসন কমবে।

ভারতে যেমন বিজেপি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হলেও তাদের সঙ্গে রয়েছে আরএসএস। আমাদের তাদের (জামায়াত) সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমি বুঝতে পারি না ভারত কেন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন, গুম, খুনের মতো অপকর্মগুলো দেখেও না দেখার ভান করে। সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারণা আছে, ভারত আওয়ামী লীগকে সহায়তা করে। আওয়ামী লীগ একটি ঘৃণিত রাজনৈতিক দল। তবে শুধু ভারতের কারণে তারা টিকে আছে। ভারতই আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করছে।

তার অভিযোগ, পুলিশ ও আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের ‘ভালো যোগাযোগ’ রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য এখন ‘ভোটের অধিকার’ ও ‘স্বাধীনভাবে বাঁচা’; যাতে পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে না যায়।

‘জিয়া পরিবারকে ছাড়া বিএনপির কথা অকল্পনীয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্যারিশমাটিক নেত্রী।’

অবসর সময়ে মির্জা ফখরুল বাংলা ভাষার ধ্রুপদি চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সিনেমা তার প্রিয়। পছন্দের তালিকায় আছে স্বনামধন্য বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ছবি।

তিনি জানান, সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ আর ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তার প্রিয় সিনেমা। তার পছন্দের তালিকায় আছেন গোবিন্দ নিহালানি, গৌতম ঘোষ আর নন্দিতা দাশ।

মির্জা ফখরুলের শেষ কথা ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা কখনো আমার নেই। দলের নেতারা যা করতে বলবেন, আমি তাই করব।’
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here