আবারও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বললো কানাডার আদালত

0
382

খবর৭১:: বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে আগের দেয়া রায় বহাল রেখেছে কানাডার ফেডারেল আদালত। দেশটিতে আশ্রয়প্রার্থী মোস্তফা কামাল নামে এক বিএনপি কর্মীর পক্ষ থেকে করা একটি রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে আবেদনটি খারিজ করে গত ৪ মে এ রায় দেয় ফেডারেল আদালত।

এ নিয়ে কানাডার আদালতে তৃতীয়বারের মতো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষিত হলো বিএনপি। প্রতিবারই বিএনপির সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিন জন।

প্রতিবারই আদালত বলেছে, বিএনপির সদস্যকে আশ্রয় দিলে সে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

প্রতিবার শুনানিতে বাংলাদেশে বিএনপির ডাকে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলন চলাকালে ব্যাপক নাশকতার কথা তুলে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজ। তার তার সদস্যদেরকে তারা আশ্রয় দিতে পারেন না।

কানাডার আইন অনুযায়ী কোনো ব‌্যক্তি যদি এমন কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, যে সংগঠন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিল, আছে বা ভবিষ‌্যতে থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে, তাহলে তিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না৷

সবশেষ রায়টি সোমবার (২১মে) ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। সেখানে কারণসহ ব্যাখ্যা দিয়ে জানানো হয়েছে, বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে তাদের দেশের মন্ত্রীর বক্তব্যকেই আবারও মেনে নিয়েছে ফেডারেল আদালত।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় আশ্রয়প্রার্থী হন মোস্তফা কামাল। আবেদনে তিনি নিজেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যু্বদল নেতা ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

তার বিষয়ে কানাডা সরকার তখন আদালতকে বলে- তিনি বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দলের সদস্য পরিচয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, সেই রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত।

এমনকি কানাডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিবিএসএ)একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতে দলটি (বিএনপি) প্ররোচণা দিচ্ছে- এমন যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে বলেও কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করেছিলেন দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রী।

সে সময় বিএনপিকে নিয়ে কানাডা সরকারের এই বক্তব্য গ্রহণ করে মোস্তফা কামালের আবেদন খারিজ করে দেয় দেশটির আদালত। পরে তিনি দেশটির ফেডারেল আদালতে রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন।

রায়ে বলা হয়, মোস্তফা কামালের রিভিউ আবেদনের পর ফেডারেল কোর্টের পক্ষ থেকে জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের অভিবাসন বিভাগ (আইডি)-কে নির্দেশ দেন।

তখন জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি সিবিএসের প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে আইডির কাছে তুলে দেন।

ওই প্রতিবেদনসহ সম্পূর্ণ বিষয়টি যাচাই ও পুনর্বিবেচনা করে এবং পরবর্তী শুনানিগুলোতে মন্ত্রীর যুক্তি পর্যালোচনা করে আইডি কানাডা সরকারের আগের বক্তব্যই সঠিক বলে সিদ্ধান্তে আসে।

আইডির সিদ্ধান্ত অনুসারে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে উল্লেখ করে ফেডারেল আদালত মোস্তফা কামালের আপিল আবেদন খারিজ করেন। একইসঙ্গে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আপিলের রায়ের পর আইডির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াগত অন্যায্যতার অভিযোগ করে সিদ্ধান্ত রিভিউয়ের আবেদন করলে এই যুক্তি মেনে নেননি আদালত। আদালত উল্টো বলেছেন, কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী সুরক্ষা আইন-আইআরপিএর প্রেক্ষিতে আইডির সিদ্ধান্ত যথেষ্ট যৌক্তিক।

বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে দ্বিতীয় রায়

এর আগে কানাডার আদালতের দুটি রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা হয়েছে। ২০১৭ সালের বছরের ১২ মে দেশটির ফেডারেল কোর্টের বিচারকের দেয়া রায়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপিকে এই সংগঠনের তকমা দেয়া হয়। তখন দেশটিতে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিবের করা রাজনৈতিক আশ্রয় নাকচ করে দেয়া রায়ে এই মন্তব্য করেন বিচারক জে ফদারগিল এই মন্তব্য করেন।

কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন প্রকাশ পেলে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আদালত ওই নেতার পরিচয় প্রকাশ করেনি। তাকে এস এ অদ্যক্ষরে পরিচয় দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ‘এস এ’ আদ্যক্ষরের ব্যক্তি ২০০৪ সালে যুবদলে যোগ দেন। ২০১২ সালে তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হন। ২০১৪ সালে তিনি কানাডায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

কিন্তু ইমিগ্রেশন ডিভিশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত আছে, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হতে পারে- এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করেন ‘এস এ’। ফেডারেল কোর্টের বিচারক জে, ফদারগিল আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে ফেডারেল কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগের আবেদনটিও তিনি নাকচ করে দেন।

বিচারক বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ডিভিশনের পর্যালোচনায় আমি কোনো ভুল খুঁজে পাইনি।’

প্রথম রায়

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদনে ফেডারেল কোর্টের বিচারক জাস্টিস ব্রাউন বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অভিহিত করেন।

সে সময় ঢাকার মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের এক ব‌্যক্তি বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর পরিচয় দিয়ে ক্যানাডা সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন৷

তার স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের আবেদন ২০১৫ সালে প্রাথমিক অনুমোদন পেলেও গতবছরের ১৬ মে তাকে ‘ক্যানাডায় প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা’ করেন দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তা৷ ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্যানাডার ফেডারেল আদালতে যান জুয়েল গাজী।

জুয়েল গাজী আদালতে দাবি করেন, বিএনপি সন্ত্রাসকে ‘প্রশ্রয় দেয় না’ এবং দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব‌্যবস্থা নেওয়ারও নজির রয়েছে৷

কিন্তু অভিবাসন কর্মকর্তার তুলে ধরা লাগাতার হরতাল ও সহিংসতার বিবরণ তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করলে আবেদনকারীর যুক্তি ‘হারিয়ে যায়’৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here