আধুনিকতার ছোয়া এখন কুড়িগ্রামের চরা লে

0
252

আরিফুল ইসলাম সুজন ঃ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ । এদেশের বৃহৎ অংশই চরা ল। বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম জেলা কুড়িগ্রাম। ১৬ টি নদ-নদী নিয়ে এ জেলা গঠিত। জেলার অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন। মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ জেলার চরা ল গুলোতে এখন ডিজিটালের ছোয়া লেগেছে। এক সময় বিস্তীর্ন এ চরগুলোতে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত গভীর অন্ধকার। সেই সময় তারা কেরোসিন দিয়ে কুপি জালিয়ে আলোকিত করত তাদের ঘর। কিন্তু সেই দিন আর চোখে পড়ে না ডিজিটালের ছোয়ায়। সন্ধ্যা হলেই এ সব চরে এখন জ্বলে উঠে সৌর বিদ্যুতের বাতি। শহরের আলোয় আলোকিত হয় সব এলাকা। চরের ছোট ছোট হাট বাজার গুলোর বিভিন্ন দোকান পাট গুলোতে সোলার স্থাপনের মাধ্যমে চলে রঙ্গিন টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরও। চরের মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে সুযোগ পেলেই বিনোদনের জন্য এসব দোকান গুলোতে টেলিভিশন এর সামনে বসেন। চলে চায়ের আড্ডা । কুড়িগ্রামের ১৬ টি নদ নদী পাড়ের প্রায় ৫লক্ষাধিক জনবসতি পুর্ন চরা ালগুলোর রাস্তাঘাট যেন এখন শহরের মত। রাস্তাায় রাস্তায় সোলার প্যানেল এর স্ট্রিট লাইট দেখে মনে হয় যেন কোন এ্ক শহর। কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে এইটা চর। শুধু কি তাই ? তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তথ্য থেকে পিছিয়ে নেই তারা । সৌর বিদ্যতের সাহায্যে ডিশ বসিয়ে চালানো হচ্ছে টিভি চ্যানেল। যার ফলে ঘরে বসেই চ্যানেল ঘুরিয়ে নিতে পারছে দেশ-বিদেশের সব ধরনের খবর। শুধু কি তাই, চরা লগুলো ইউনিয়ন ডিজিটাল ই সেন্টারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে চাকুরীর আবেদন, পরিক্ষার রেজাল্টসহ সব ধরনের অনলাইন সেবা পাচ্ছে প্রতি মুহুর্তে । প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল দেশ গড়ার ঘোষনা এখন আর স্বপ্ন নয় এ এলাকার মানুষদের কাছে। এসব স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিনত হচ্ছে চরা ল বাসিন্দাদের কাছে। যোগাযোগের দিক থেকেও তারা আর পিছিয়ে নেই। রাস্তাঘাট উন্নত হওয়ায় এসব চরে এখন দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের। এক সময় নদীতে মাছ ধরে আর জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবীকা নির্বাহ করত এই মানুষগুলো। প্রাচীন চাষাবাদে ফসল তেমন ভালো হতো না কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে অনেকটাই স্বাবলম্বী কৃষকরা। এখন বারো মাসে তেরো রকমের ফসল ঘরে তোলেন তারা। ফলে কৃষকের মুখে ফসলের হাসি বারো মাসেই। শিশুরা চরের উদর মাটি গায়ে মাখিয়ে বড় হত । এক সময় বাবার সাথে মাছ ধরতে কিংবা জমিতে ফসল টানার জন্য মাঠে যাওয়া লাগতো কোমলমতি শিশুদের । কিন্তু এখন আর নয়। এখন চরের এসব শিশু বড় হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির সান্নিধ্য পেয়ে। তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা দেখে এখন নিজেই স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকারি এবং এনজিও কর্তৃক পরিচালিত চরের স্কুল গুলোতে এখন ডিজিটাল পদ্ধতি মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। যার কারনে শিক্ষা থেকেও পিছিয়ে নেই চরের শিশুরা । শুধুই শিক্ষায় নয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতেও এখানে কাজ করছে অনেক সরকারী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থ। যার ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন এখন চরের মানুষ। চিকিৎসার জন্য এখন আর অপেক্ষায় থাকতে হয় না তাদের। হাতের কাছেই কমিউনিটি ক্লিনিকে পাচ্ছে মনের মত সেবা। শুধু তাই নয় পরিবার পরিকল্পনার জন্য তাদের আর অপেক্ষায় থাকতে হয় না। প্রতিনিয়ত এফডব্লিউভি, এফডব্লিউএ, এফপিআইগণ নিজে গিয়েই সেবা প্রদান করছেন। ফলে জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্কে সবাই এখন সচেতন। সবমিলে চরা লের বাসিন্দারা যেন স্বপ্নের দ্বীপে বসবাস করছেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here