আজ ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস

0
350

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে হবিগঞ্জ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মুক্ত হয় হবিগঞ্জ জেলা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া হবিগঞ্জের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্নবাসন ও বধ্যভূমি, গনকবরগুলো সংরক্ষণ, গণহত্যা এলাকার হতাহতদের পরিবারের লোকদের সাহায্য-সহযোগিতা এবং একাধিক স্মৃতিসৌধ নির্মানের দাবি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলো থেকে সারা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর বিভক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম এ রব (বীরোত্তম) ও মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নির্দেশে ভারতের খোয়াই বাঘাই ক্যাম্পের ২২ কোম্পানীর ৩৩ মুক্তিফৌজ নিয়ে গঠিত ১নং প্লাটুন কমান্ডার আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বাহুবলে অবস্থান নেয়। এরপর তারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হবিগঞ্জের বিভিন্ন পাক ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন পাকসৈন্য প্রাণ হারায়। একটানা ৩ দিনের অভিযানের পর ৬ ডিসেম্বর ভোরে পাক বাহিনী পালিয়ে যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেসে সারা শহর প্রদক্ষিণ করে সদর থানায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ওই দিন একই সাথে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, লাখাই, চুনারুঘাট ও অন্যান্য উপজেলাও মুক্ত হয়। যে সকল মুক্তিযোদ্ধা হবিগঞ্জ মুক্ত করেন তারা হলেন আব্দুস শহিদ, সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু, মোঃ শুকুর মিয়া, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ মিয়া, মোঃ রইছ আলী, আব্দুল কুদ্দুছ, আবু মিয়া, আঃ লতিফ, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, কালা মিয়া, ছাবু মিয়া প্রমুখ। আর এ হবিগঞ্জ মুক্ত করতে গিয়ে বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর, চুনারুঘাট উপজেলার লাল চান চা বাগান, নালুয়া চা বাগান ও বাহুবল উপজেলার রশিদপুর সহ বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে জেলার ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধে আহত হন ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া নিরীহ অসংখ্য মানুষ নর-নারী ও মুক্তিযোদ্ধা হানাদারদের নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকারে শহীদ হন। এসব শহীদদের জন্য তেলিয়াপাড়া, ফয়জাবাদ, কৃষ্ণপুর, নলুয়া চা বাগান, বদলপুর, মাকালকান্দিতে বধ্যভূমি নির্মিত হয়। হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও তরুন প্রজন্মের দাবি অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন, অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্নবাসন ও গণহত্যা, বধ্যভূমি ও মুক্তিয্দ্ধুকালীন স্মৃতিস্থানগুলো সংরক্ষন করা হউক। পাশাপাশি গণহত্যা এলাকাগুলোতে এখনো যারা পঙ্গু, ক্ষতিগ্রস্থ ও হতাহতদের পরিবারগুলোর অবর্ণনীয় দূরাবস্থা ও তাদের পূনর্বসানের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ভূক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সাবেক কমান্ডার এডঃ মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, ৭১ এর ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ অভিযানে হানাদাররা পিছু হটতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া পর্যন্ত মুক্ত হয়। তিনি বলেন, ৭১ এর যুদ্ধকালে দেশ বিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু জামাত-শিবির এ বিচার প্রক্রিয়া নস্যাত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এডঃ মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও যুদ্ধক্ষেত্র, মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি, চারণভূমি সংরনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং অধিকাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here