আজ সোমবার কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস

0
278

খবর৭১:আজ সোমবার কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ এর এই দিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া হানাদার মুক্ত হয়েছিল।

সেদিন কোটালীপাড়াবাসী পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। অনেক দুঃখ বেদনার পরও এদিন এলাকার মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দ আর উল্লাস।

৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাকডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালিয়ে ক্যাম্পটি দখল করে নেয়। রাজাকার ক্যাম্পের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করেন। এরই মধ্যে দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।
দিবসটি পালন উপলক্ষে হেমায়েত বাহিনী আজ সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার টুপরিয়া গ্রামে অবস্থিত হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি যাদুঘরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

জানা গেছে, মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ অঞ্চলে পাকবাহিনী ও তাদের দোষরা ছিল খুবই শক্ত অবস্থানে। আর সে কারণে যুদ্ধ শুরু হলে দেশে পালিয়ে আসেন কোটালীপাড়ার সন্তান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈনিক হেমায়েতউদ্দিন। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী।

সাড়ে ৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন হেমায়েত বাহিনী। কোটালীপাড়ায় তিনি একটি ট্রেনিং ক্যাম্পও গড়ে তোলেন। যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও যুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় হেমায়েত বাহিনী।
উলেখযোগ্য যুদ্ধ হয় হরিনাহাটি, মাটিভাঙ্গা, বাশবাড়িয়া, ঝনঝনিয়া,রামশীল,জহরের কান্দি, কোটালীপাড়া সদরসহ প্রভৃতি স্থানে। এ ছাড়াও ছোট যুদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থানে। আর
এসব যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন হেমায়েত বাহিনী প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুজিবুল হক বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু যৌথবাহিনীই দেশ মাতৃকার মুক্তিযুদ্ধ করেনি। পাক হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে তৎকালীন সময়ে এদেশে কয়েকটি অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল কয়েকটি বাহিনী। ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল “হেমায়েত বাহিনী”। আমরা এই হেমায়েত বাহিনীর অধিনে মুক্তিযুদ্ধ করেছি।

কোটালীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামচুল হক বলেন,৭২টি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এই হেমায়েত বাহিনী যুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে। এই বাহিনীর
সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ হাজার। তার মধ্যে থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ২৪ জন আহত ও ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কোটালীপাড়া উপজেলার গোলাম আলী, বেলায়েত, আবুতালেব, আবুল খায়ের, মোক্তার হোসেন, রতন কুমার, মোয়াজ্জেম হোসেন, টুঙ্গীপাড়া উপজেলার বেলায়েত হোসেন, মুকসুদপুর উপজেলার আবুল বাশার, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ছাত্তার মৃধা, সেকেন্দার, নুরম্ন বেপারী, পরিমল শীল, আগৈলঝাড়া উপজেলার তৈয়াবালী, নলছিটি উপজেলার ওসমান, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার মকবুল হোসেন, আঃ ছাত্তার এবং ঢাকার ইব্রাহিম।

কোটালীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম দাড়িয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হেমায়েত বাহিনীর সদস্যরা ১৩৪টি অপারেশন পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধটি অত্র অঞ্চলে ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধ বলে পরিচিত। হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধে মারত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের কারণে দেশ স্বাধীন হবার পর হেমায়েত উদ্দিনকে “বীর বিক্রম” খেতাবে ভুষিত করা হয়।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here