আগস্টেই পানিশূন্য খরস্রোতা তিস্তা

0
443
আগস্টেই পানিশূন্য খরস্রোতা তিস্তা
খরস্রোত তিস্তা মধ্য আগস্টেই পানির অভাবে শুকিয়ে হাঁটুজলে পরিণত হয়েছে। ছবিঃ সংগৃহীত।

খবর৭১ঃ খরস্রোত তিস্তা মধ্য আগস্টেই পানির অভাবে শুকিয়ে হাঁটুজলে পরিণত হয়েছে। ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশ অংশে তিস্তা এখন ছোট খালে পরিণত হয়েছে। ফলে তিস্তা অববাহিকায় জীববৈচিত্য হুমকির মুখে পড়েছে। জানা গেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী।

যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদে মিশে যায়। তিস্তা নদী দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
তিস্তার পানি প্রবাহ এককভাবে ব্যবহার করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে।

নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরেই বাংলাদেশে পানি দেয় ভারত। প্রয়োজন ছাড়াই বর্ষাকালে বন্যার অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে শুষ্ক মৌসুমে পানির ব্যাপক প্রয়োজন দেখা দিলেও মিলে না এক কিউসেক পানি। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির কাঙ্ক্ষিত ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। তিস্তার পানির নিয়ে দীর্ঘদিনের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিটি এখনও পূরণ হয়নি তিস্তাপাড়ে।

ফলে বর্ষা শেষ না হতেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিস্তা নদীতে দিনভর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে ও খেয়াঘাটের মাঝিরা বর্তমানে কর্মহীন হতে বসেছে। সবমিলে চিরচেনা হিংস্রো তিস্তা এখন পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত হয়ে ঢেউহীন শান্ত কবিতার ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। পানির অভাবে তিস্তা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা রেলসেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও গংগাচওড়া শেখ হাসিনা সেতুটি যেন প্রহসনমূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু-ধু বালুচরের তিস্তার ওপর। ব্রিজ থাকলেও পায়ে হেঁটেই পাড় হচ্ছে অনেকেই। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালু কনা। তিস্তার বুকে জেগে উঠা চরের বালু কনায় ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদের প্রস্তুতি নিলেও শরৎকালেই পানিশূন্য তিস্তায় সেচ নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।

তিস্তাপাড়ের কৃষক তাহাজুল ইসলাম, আবুল মিয়া ও খালেক জানান, বর্ষাকালে প্রচুর পানি ছেড়ে দেওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় ফসলহানীসহ ঘরবাড়ি হারা হয় এ অঞ্চলের মানুষ। আবার শুষ্ক মৌসুমে ফসল রক্ষায় পানির প্রয়োজন হলেও তিস্তায় পানি দেয় না ভারত। এবার মধ্য আগস্টেই পানিশূন্য তিস্তাপাড়ের চরাঞ্চলে চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী শাসন ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না থাকায় তিস্তা নদী কৃষকের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আগস্টেই কমেছে তিস্তার পানি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল ধরা হয়। সেই অনুযায়ী এ অঞ্চলে বা ভারতের সিকিমে বৃষ্টিপাত হলে তিস্তায় পানি বাড়তে পারে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে সেচ প্রকল্প সচল রাখা সমস্যা হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here