আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান আসছে

0
571

খবর ৭১ঃ শিগগিরই শুদ্ধি অভিযানে নামছে আওয়ামী লীগ। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকায় প্রচুর অগাছা ও সুবিধাবাদী ঠাঁই নিয়েছে দলে। এদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরপরই অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি।

যে কোনো দল সরকার গঠন করলেই সুর বদলিয়ে ভিড়ে যায় অনেক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী। তারা সুযোগ-সুবিধা শিকারে মত্ত হয় আর বদনাম হয় সরকারের। এমন বাস্তবতায় শুদ্ধি অভিযানের পথে হাঁটছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

এজন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের কাছেই ফিরিয়ে দিতে চান দলীয় সভানেত্রী। তাই তিনি চান এখনই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে। এজন্য তালিকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী এবং যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাদের তালিকা করার কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই।

এ ছাড়া সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে বিতর্কিত কাউকে দলে ঢুকতে দেওয়া চলবে নাÑ এমন বার্তাও যাচ্ছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে। নেতারা বলছেন, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগে হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হাত ধরে জামায়াতে ইসলামীর আমির থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ২ থেকে ৩ হাজার নেতা আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। একইভাবে বিএনপির নেতারাও আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত থেকে ফুলের মালা নিয়ে নৌকায় উঠেছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতা, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ মাদক মামলা।

মূলত মামলা থেকে বাঁচতেই তাদের আওয়ামী লীগে যোগদান। তবে তাদের এ যোগদানকে প্রথমে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও হঠাৎ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের যোগ দেওয়াকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন দলটির হাইকমান্ড। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছেন অনুপ্রবেশকারীরাই। কিছু আসে স্বার্থ হাসিলের মতলবে, আবার কেউ কেউ নিজের দোষ ঢাকতে এবং শাস্তি থেকে বাঁচতে। নেতারা মনে করেন, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের মূল কারণও এসব অনুপ্রবেশকারী। ত্যাগী ও দীর্ঘ সময় দলকে সেবা দেওয়া নেতাদের বঞ্চিত করে অনুপ্রবেশকারীদের দলীয় পদ দেওয়ায় অনেক স্থানেই বিপত্তি বেধেছে।

গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত থেকেও ভয়ঙ্কর নব্য আওয়ামী লীগ। এরা সুযোগসন্ধানী। এদের চিনে রাখতে হবে। যাদের কখনো সভা-সমাবেশে দেখিনি তারাও এখন আওয়ামী লীগ করে। এদের থেকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। একইভাবে দলে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি গত রবিবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, দলে অনুপ্রবেশকারীরা বিশৃঙ্খলা ঘটায়। এদের চিহ্নিত করতে হবে।

দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হবে। এর মাধ্যমে দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। অনুপ্রবেশকারীরা দলের পদপদবিতে থাকলে তাদের বাদ দেওয়ার পাাশাপাশি যারা তাদের পুনর্বাসন করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের অন্তর্দলীয় কোন্দলের যেসব ঘটনা ঘটছে তার অধিকাংশই অনুপ্রবেশকারীরা ঘটাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে তথ্য রয়েছে। সে কারণেই তিনি এখন শুদ্ধি অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধু অনুপ্রবেশকারীই নয়, স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা-কর্মী এখন সুবিধাবাদী রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন। দলের শীর্ষ নেতা মনে করেন এটা অশনিসংকেত।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক আছে, যখন যে সরকার তখন সে সরকারের সঙ্গে থাকে। ঠিক তেমনি আমাদের দলেও কিছু লোক ঢুকে পড়েছে; যারা এখনো মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করে না। স্বাধীনতাকে মানে না। এদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। কারণ এরাই দলের বদনাম করে থাকে। ’

সূত্র জানান, আগামী শুক্রবার বিকালে দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডেকেছেন দলীয় সভানেত্রী। ওই বৈঠকে তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান থেকে শুরু করে আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি, মুজিববর্ষ পালনে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী, পরগাছা, আগাছার ব্যাপারে আমাদের দলীয় সভানেত্রীর একটি জরিপ আছে। দলের সকল পর্যায়ের নেতার প্রতি নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের কাউকে দলে না ভেড়াতে। যদি কেউ ভেড়ান সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী কেউ দলে পদপদবি পেয়েছেন এমন নজির নেই। নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়েই অনুপ্রবেশকারী, পরগাছা উপড়ে ফেলা হবে। ’
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here