অস্তিত্ব সঙ্কটে সাতক্ষীরার ২৭ নদী ও ৪২৯ খাল : অকেজো হয়ে পড়েছে ২১৬টি সোইস গেট

0
332

সেলিম হায়দার প্রতিনিধিঃ
অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে সাতক্ষীরা জেলার ৪২৯টি খাল। এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টি সোইস গেটেরও নাজুক অবস্থা। ২৭টি নদীর ১৩টিতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এসব নদী থেকে প্রবাহিত চার শতাধিক খাল তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বেশিরভাগ খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এসব খালে বাঁধ দিয়ে লোনা পানি তুলে মাছ চাষ করা হচ্ছে। মাত্র কয়েকটি খাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ অ লে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোন উপায়ন্ত না পেয়ে নিজ উদ্যোগে খাল কেটে বসতবাড়ি উঁচু করার চেষ্টা করছেন ভুক্তভোগীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খালের এমন চিত্র উঠে এসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, সাতক্ষীরার ২৭টি নদীর শাখা প্রশাখায় প্রবাহিত ছিল ৪২৯টি খাল। দখল, অপরিকল্পিত সøুইস গেট, অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে বেশির ভাগ খাল এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। অনেক জায়গায় নদী ও খালের বুকে জেগে উঠা চরে মানুষ বসতি শুরু করেছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টি সোইস গেট অকেজো হয়ে কালের সাক্ষীতে পরিণত হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতায় ২১৬টি সøুইস গেট রয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ১২৩টি সোইস গেট রয়েছে। যার ৩৪টি সম্পূর্ণ অকেজো। এছাড়া সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর অধীনে ৯৩টি সোইস গেটের মধ্যে ২৮টি সম্পূর্ণ অকেজো পড়েছে। ৫০টির তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় এগুলো পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
পাউবো-১ এর একটি তথ্যে দেখা যায়, ১২৩টি সোইস গেটের মধ্যে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সালে নির্মিত ৩৫টি, ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালে নির্মিত ৫টি, ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সালে নির্মিত ৩০টি, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৬ সালে নির্মিত ৪৮টি এবং ১৯৮৯ থেকে ৯৩ সালে নির্মিত ৫টি। যার বেশির ভাগ সোইস গেট এখন অকেজো।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ডিভিশন ১, ৩, ৫ ও ১৫ এর আওয়তায় সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের অংশে হাবড়া ও সদর এবং আশাশুনির মরিচ্চাপ নামে দুটি নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে মাছের ঘের তৈরি করেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের সব পথ।
জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালের ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি প্যাকেজের মাধ্যমে কলারোয়ার মুরারীকাটি থেকে সদরের সুপারীঘাটার দিকে ২৫ কিলোমিটার নদী খননের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদাররা ৫/৭ ভাগ কাজ করেই সব কাজ শেষ করার দাবি করে বিল তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনগণের তীক্ষè দৃষ্টির কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফলে কাজের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ধার্য করা হয়। কিন্তু ২৫ শতাংশ খনন কাজ হওয়ার দাবির পর বিভিন্ন বিলের পানি কমানোর নামে নদীর উপর নির্মিত তিনটি ক্লোজার কেটে দেওয়া হয়। বর্ষা শেষে দেখা যায় ক্লোজারের পাশে নামকাওয়াস্তে খননকৃত জায়গাগুলো আবারো পলিমাটিতে ভরে গেছে। নতুন করে খনন করতে দ্বিগুণ খরচ দেখানোয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ বন্ধ করে দেয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান জানান, ১, ২, ৬ ও ৮নং পোল্ডারের আওতাধীন নদী খনন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫৯৩ কোটি টাকা, নদীর তীর সংস্কারের জন্য ১৬শ’ ৪৫ কোটি টাকা এবং জাইকার কাছে ৯০ কোটি টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক জানান, বেতনা খননে ১, ২, ৪ ও ৬নং পোল্ডারের আওতাধীন নতুন করে ৪৪ কিলোমিটার ও মরিচ্চাপ নদীর ৩৭ কিলোমিটার খননের জন্য ৫৪৩ কোটি টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। এতে নদীর নাব্যতা বাড়াতে পাউবো-১ এর আওতাধীন দেবহাটার টিকেট ও শুকদেবপুর বিলে টিআরএম পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here