অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের জমি দখল করে আসছে ক্যাসিনো অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ফিরোজ!

0
400
মাদক মামলায় আবার রিমান্ডে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান শফিকুল
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ।

খবর৭১ঃ ঢাকা শহরে দীর্ঘদিন ধরে কিছু জালিয়াত চক্র আদালতের ডিক্রি জালিয়াতি করে অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের জমি দখল ও হয়রানি করে আসছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত কলাবাগান ক্রীড়াচক্র সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ এই চক্রের গডফাদার।

অভিযোগ রয়েছে, ফিরোজের তত্ত্বাবধায়নে একটি জালিয়াত চক্র বহুবছর ধরে ধানমন্ডি, পান্থপথ, কলাবাগান ও রাজাবাজার এলাকার বিভিন্ন জমির কাগজপত্র জালিয়াতি করে অবৈধ দখল ও হয়রানি করে আসছে। এই কাজে তারা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। রিমান্ডে থাকা ফিরোজ জমি দখলের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

যেভাবে জালিয়াতি: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে ফিরোজের জালিয়াত চক্রটির চোখ পড়ে পান্থপথের বউ বাজারের মো. শহিদুল্লাহ ও রোস্তম আলী গংদের প্রায় দুই একর খালি জমিতে। ফিরোজ জমিটি জালিয়াতির জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। জালিয়াত চক্রটি প্রথমে তিন জন মানুষকে এই জমিটির মালিক হিসেবে দাঁড় করভন যাদের পিতা ও মাতার নাম এবং জমিটির প্রকৃত মালিক মো. শহিদুল্লাহর পিতা ও মাতার নাম একই। এই তিন জনের একজনের নাম পরিবর্তন করে মো. শহিদুল্লাহর নামের সঙ্গে মিল রেখে ‘শহিদুল্লাহ আবদুল মজিদ’ রাখা হয় যার প্রকৃত নাম আবদুল মজিদ। অন্য দুই জন হলেন সুফিয়া বেগম ও রাজিয়া বেগম।

জালিয়াত চক্রের শহিদুল্লাহ আবদুল মজিদ ভুয়া মো. শহিদুল্লাহ সেজে সিটি করপোরেশন থেকে আলোচ্য জমির বিপরীতে একটি হোল্ডিং নম্বর নেন। এটি প্রকৃত মালিক মো. শহিদুল্লাহর আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বাতিল করে। ভুয়া শহিদুল্লাহ মজিদ এই হোল্ডিং নম্বর ব্যবহার করে ইলেকট্রিসিটি, পানি ও গ্যাসের লাইনও নেন। শফিকুল আলম ফিরোজ আবদুল মজিদের নাম কখনো শহিদুল্লাহ মজিদ আবার কখনো শহিদুল্লাহ আব্দুল মজিদে পরিবর্তন করে প্রকৃত মালিক মো. শহিদুল্লাহর জমিতে সাইনবোর্ড লাগান এবং জমিটি দখলের চেষ্টা করেন; কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগের কারণে তিনি জমিটি দখল করতে ব্যর্থ হন।

এভাবে জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে কালা ফিরোজ জালিয়াত চক্রের সদস্য সুফিয়া বেগম, রাজিয়া বেগম ও শহিদুল্লাহ আবদুল মজিদকে দিয়ে ১৯৮০ ও ৮৫ সালের সহকারী জজ ১ম আদালত ঢাকার দেওয়ানি মোকাদ্দমার ডিক্রি জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করে যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে দেওয়ানি মোকদ্দমা দাখিল করান। এক পর্যায়ে বিবাদী মো. শহিদুল্লাহ গংরা আদালতে লিখিত আবেদন করে দাবি করেন যে, ডিক্রিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। বিবাদীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা জজ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। জেলা জজের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা জজ এ এইচ এম মাহমুদুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্ত রিপোর্টে ঐ রায়টি জাল বলে প্রমাণিত হয়। তদন্তে অতিরিক্ত জেলা জজ জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেন। এরপর আদালত তার আদেশে মামলাটির আরজি খারিজ করেন এবং পাশাপাশি জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আদেশ প্রদান করেন।

ফিরোজের নেতৃত্বাধীন জালিয়াত চক্র যখন বুঝতে পারে যে, তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তখন তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। তিনি ভুয়া মোকদ্দমার ডিক্রির মাধ্যমে এসিল্যান্ড অফিস হতে রেকর্ড সংশোধনের পর পুনরায় জমিটি দখলের জন্য উদ্যোগী হন। নিজের নামে জমিটির দলিলও সম্পাদন করেন। দলিলে জমির মূল্য উল্লেখ করেন ১৭ কোটি পঁচিশ লাখ টাকা। দলিলে উল্লেখিত বিপুল পরিমাণ টাকার উত্স ফিরোজ তদন্ত কর্মকর্তাদের জানাতে পারেনি। উল্লেখ্য, ফিরোজ দেওয়ানি আদালতের মামলায় ১ দশমিক ৮২ একর সম্পত্তি দাবি করলেও দলিল করেছেন মাত্র ৬৬ দশমিক ৬৮ শতাংশের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here