অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগোচ্ছে দেড় শতাধিক ছাত্রী সাইকেল!

0
437

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: বখাটেরাও আগের মতো উত্যক্ত করার সুযোগ পায় না। সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করায় প্রথমদিকে অনেকইে নানা রকম মন্তব্য করেছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে ওরা এখন নিয়মিত ও সময়মত স্কুল উপস্থিত হচ্ছে। পড়াশোনা ভাল হওয়ায় বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভাল। আগামীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নড়াইলের সাইকেল বালিকারা। নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক ছাত্রী এখন ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। এখন আর তাদের ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪শ’। এই বিদ্যালয়টি নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত।
ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী শান্তনা গুপ্ত, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, আমার বাড়ি বাকলি গ্রামে। স্কুল থেকে দুরত্ব ৫ কিলোমিটার। এক সময়ে ভ্যানে ও পাঁয়ে হেটে স্কুলে যেতাম। তখন সময় মতো স্কুলে উপস্থিত হতে পারতাম না, ঠিকমতো ক্লাস ধরতে পারতাম না। বাবা মায়েরও অতিরিক্ত টাকা দিতে অসুবিধা হতো। তখন আমরা কয়েকজন ছাত্রীরা ভাবলাম ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারে তাহলে আমরা পারবো না কেন?। তখন থেকে স্যার ও আমাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নেই। বাড়িতে ও গ্রামের ফাঁকা জায়গায় সাইকেল চালানো শিখে আমরা কয়েকজন স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করলাম।
নবম শ্রেণির ছাত্র আসলাম হাওলাদার বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে আসে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটেরা তাদের উত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমরা ছেলেরা প্রতিহত করি। অনেক সময় স্যারের সহযোগিতা এবং ওইসব বখাটেদের বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করি’’।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, বিদ্যালয়টি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অ লে অবস্থিত। এই স্কুলে প্রায় ৪শ’ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ১৮৩ জন ছাত্রী রয়েছে। এই স্কুলের মেয়েরা ৫/৭ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসতো। তাদের হেটে আসতে অনেক সময় লাগত এবং তখন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ত। যার কারনে ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগি হতে পারতো না। আমরা ও অভিভাবকরা চিন্তুা ভাবনা করে মেয়েদের সাইকেল চালনায় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। তাদেরকে বলেছি ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে আসতে পারে, তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। তখন অভিভাবকদের সম্মতিতে ছাত্রীদের সাইকেল কিনে দেয় তাদের অভিভাবকরা। এখন ওরা নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। আমরা এখন ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে দেখি না।
স্থানীয়রা, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ‘গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াতের ঘটনাটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এভাবে যদি অন্য অন্য স্কুলের মেয়েরাও স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেলকে বাহন হিসেবে বেঁছে নেয় তাহলে তাদের অর্থ, সময় সব কিছুই সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। বাইসাইকেল পরিবেশবান্ধব। এতে পরিবেশ দূষিত হয় না। সব স্কুলের মেয়েরা সময় ও অর্থ সাশ্রয় এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য বাইসাইকেলকে বাহন হিসেবে বেঁেছ নিবে এই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি গুয়াখোলা স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে যথাযথ র্কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here