অঘোষিত গণ পরিবহন ধর্মঘটে ক্যাবের উদ্বেগ: দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি

0
273

বিজ্ঞপ্তিঃ নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অঘোষিতভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষের জীবনে যোগ হলো আরেক ভোগান্তি। ২৯ জুলাই ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স চেক এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়নের চেষ্টা করে। এসময় অধিকাংশ গাড়ির চালকদের কাছে বৈধ লাইলেন্স পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা এইসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের বাধ্য করেন। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে বাধ্য হওয়ায় গাড়ি এবং নিজেদের নিরাপত্তার কাল্পনিক কারন দেখিয়ে শহর এলাকাসহ দূরপাল্লার গাড়িও বন্ধ করে দেয় চালক-মালিকরা। তবে কিছু সংখ্যক টেম্পো, হিউম্যান হলার, সিএনজি চলতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অঘোষিত ধর্মঘট আহবান, যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে কর্মজীবী মানুষসহ নানা শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ ও বয়স্করা। এ অবস্থায় সাধারন জনগনকে জিম্মি করে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে দেশের আপামর জনসাধারনের প্রাণের দাবিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা, অনতিবিলম্বে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়ন, ভোগান্তি ও হয়রানি লাগবের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বিভ্রান্ত করার জন্য কৃত্রিমভাবে পরিবহন সংকট তৈরী করে জনদুর্ভোগ সৃষ্ঠি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রুখে দিতে মালিক শ্রমিক পরিবহন গ্রুপের অপতৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন প্রায় ছয়দিন পেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবি সরকার ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জাতির সুপ্ত বিবেককে জাগ্রত করেছেন। সেকারনে জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে কিছু রাজনৈতিক উচ্চ বিলাশী নেতা-কর্মীরা সাধারন শির্ক্ষাথীদের সামাজিক আন্দোলনকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারে নানা অপকর্ম, গুজব ছড়াছে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। কারন রাজনৈতিক দলগুলি বর্তমানে সাধারন জনগনের সমস্যা, ভোগান্তির নিয়ে আন্দোলনের চেয়ে কিভাবে নিজেরা ক্ষমতায় আরোহন ও থাকতে পারবে সেটাই মুখ্য হয়ে আছে, সেখানে সাধারন জনগনের স্বার্থ তাদের কাছে গৌণ। যার জলন্ত প্রমান দেশব্যাপী সাধারন শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গণপরিবহনে শৃংখলা আনায়নে প্রধান বাধা গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিক গ্রুপ যারা কোন আইন ও নিয়মনীতি তোয়াক্তা করতে চান না। যার কারনে দেশব্যাপী যতবারই গণপরিবহন নিয়ে সভা সেমিনার ও আলোচনা করা হয় ততবারই তাদের নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল, দলাদলি ও শক্তি প্রয়োগে তা ফলপ্রসু হতে দেয়নি। যার কারনে প্রশাসন বারবার গণপরিবহনে শঙ্খলা আনতে উদ্যোগ নিলেও মালিক-শ্রমিকদের প্রভাব, শক্তি প্রয়োগ, জনগনকে জিম্মি করে অবৈধ ঘর্মঘট আহবান করে কোন উদ্যোগ সফল হতে দেয় না। যার ফলে শুধুমাত্র ফিটনেসবিহীন গাড়ী নয়, ২০-৩০ বছরের বেশী লক্কর যক্ক্র গাড়ী ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোন উপায় নাই। ফিটনেস, লাইসেন্স সবকিছুই যেন টোকেনে চলে। গাড়ীগুলি অবৈধ ও ফিটনেস না থাকার কারনে একশ্রেণীর পুলিশকে চাঁদা দিয়েই গাড়ী চালাতে হচ্ছে। আর ভোক্তাদের পকেট থেকে পুলিশ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির চাঁদার পুরো অংশই যাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ প্রশাসন রেগুলেটরী কর্তৃপক্ষ হিসাবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু বিআরটিএ এর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে পরিবহন মালিক- শ্রমিক ও প্রশাসনের দ্বিপাক্ষিক ও বৈঠকগুলো অনেকটাই দেনদরবারের আলোচনা ছাড়া কিছু হচ্ছে না। ফলে প্রশাসন কার্যত আইনের প্রয়োগ ঘটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি বা গণপরিবহন সংক্রান্ত যাবতীয় নীতি নির্ধারনীতে ভোক্তাদের কোন অংশগ্রহনের সুযোগ নাই। তাই গণপবিহনে শৃংখলা আনায়ন ও নৈরাজ্য বন্ধে যে কোন আলোচনায় পরিবহন মালিক গ্রুপ ও শ্রমিকদের পাশাপাশি ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে জনস্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাবে। অন্যদিকে গণপরিবহনে অনিয়ম, শৃংখলা আনতে নাগরিক পরীবিক্ষন জোরদার, নাগরিক নজরদারি বাড়ানো দরকার। তাই সে বিষয়ে সরকারকে আশু ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুেপর সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here