বাচ্চাদের টাইফয়েড ও সঠিক চিকিৎসা

0
2404
বাচ্চাদের টাইফয়েড ও সঠিক চিকিৎসা
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

বর্ষায় টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত অসুখ থেকে আপনার বাচ্চাকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন? বিস্তারিত জানতেঃ

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর বর্ষাকাল যেন একটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। তবে সঙ্গে করে আনে নানারকম অসুখ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। আজ কাশি, কাল গলাব্যথা, এসব তো হামেশা লেগেই থাকে। এই হয়তো স্কুল থেকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ফিরল, বা খেলতে গিয়ে হয়তো এন্তার জল ঘাঁটল, এইসব নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। সবসময় যে কঠিন অসুখ হয় তাও নয়। সাধারণ সর্দিকাশি হয়তো কাফ সিরাপ খেয়ে সেরেও যায়। কিন্তু যদি শক্ত কোন রোগ হয়? টাইফয়েড এই ধরনেরই একটি অসুখ। বর্ষাকালে এর প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।

টাইফয়েড বা টাইফয়েড ফিভার আসলে একটি পানিবাহিত অসুখ। এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে তবে সাধারণত বাচ্চাদের এবং কমবয়সিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। মানুষই এই রোগের একমাত্র বাহক। টাইফয়েডের ব্যাক্টিরিয়া এই অসুখে আক্রান্ত কারোর স্টুল বা ইউরিনের সঙ্গে বের হয়। এই জীবাণু যদি কোনভাবে পানীয় জলের মধ্যে প্রবেশ করে, এবং সেই জল যদি কারোর পেটে যায় তাহলে সেই ব্যক্তির টাইফয়েড হতে পারে। মাঝে মাঝে এই রোগের জীবাণু খাবারের মধ্যেও থাকতে পারে। তাই টাইফয়েড ফিভার প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমেই পার্সোনাল হাইজিনের উপর জোর দেওয়া উচিত। শুধু বাচ্চা নয়, বাবা মা থেকে শুরু করে বাড়ির সকলকেই উপযুক্ত স্যানিটেশন বজায় রাখতে হবে।

লক্ষণঃ

সাধারণত টাইফয়েডের প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। অবিলম্বে সঠিক চিকিৎসা না করালে কিন্তু এই জ্বরটা বেশ কিছুদিন ধরে থাকতে পারে। জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যাথা বা কাঁপুনির মতো আনুষঙ্গিক সমস্যাও হতে পারে। এছাড়া টাইফয়েডের অন্যান্য উপসর্গগুলি হল পেটব্যথা বা পেট খারাপ হওয়া, বমি এবং কাশি। সাধারণত টাইফয়েড হওয়ার পাঁচ-ছয় দিন বাদে এক ধরনের কাশি শুরু হয়, যেটাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস। টাইফয়েডের ব্যাক্টিরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পাঁচ থেকে দশ দিন পরে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। সময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা না হলে অনেকরকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। রোগটি বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে গেলে অন্ত্র ছিঁড়ে যেতে পারে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে, এমনকী হেমারেজও হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় ইনটেস্টিনাল পারফোরেশন অ্যান্ড হেমারেজ। টাইফয়েডের জীবাণু অনেক সময় মানুষের গল ব্লাডারে বাসা বাঁধে। এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার। অনেকের টাইফয়েড সেরে যাওয়ার পরেও গল ব্লাডারে টাইফয়েডের জীবাণু থেকে যেতে পারে। গল ব্লাডার থেকে এই জীবাণু স্টুল বা ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

বাচ্চাদের টাইফয়েড ও সঠিক চিকিৎসা

চিকিৎসাঃ

টাইফয়েডের লক্ষণগুলি বাচ্চার মধ্যে দেখা গেলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। টাইফয়েড ডায়াগনোজ় করার জন্য বিশেষ কয়েকটা টেস্ট আছে  যেমন ব্লাড কালচার, স্টুল কালচার, ইউরিন কালচার ইত্যাদি। সেই টেস্টগুলি দ্রুত করিয়ে নিতে হবে। প্রধানত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েই টাইফয়েডের চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া জ্বর কমানোর ওষুধ খেতে হয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জ্বরটা কমে গেলে সাধারণত পাঁচ-ছয় দিনের একটা অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স দেওয়া হয়। অন্যথায় দশ থেকে বারো দিন অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যেতে হবে। সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা করা হলে টাইফয়েড সেরে যায়।

টাইফয়েডের জীবাণু যেহেতু মানুষের স্টুল বা ইউরিনের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তাই বাড়িতেই একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। টাইফয়েড প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমেই পরিবারের সকলের উপযুক্ত হাইজিন এবং স্যানিটেশন মেন্টেন করা উচিত। ভাল করে হাত-পা ধুতে হবে, বিশেষ করে খাওয়ার আগে। জল ফুটিয়ে খাবেন। বাইরের যে সমস্ত খাবার থেকে ইনফেকশন হতে পারে সেগুলি বরং এড়িয়ে চলাই ভাল। ধরুন আপনি রাস্তায় কাটা ফল খেলেন। এদিকে সেই ফলটা হয়তো এমন জল দিয়ে ধোয়া হয়েছে যেটায় টাইফয়েডের জীবাণু উপস্থিত। ব্যস, আর দেখতে হবে না।

বাচ্চাদের টাইফয়েড ও সঠিক চিকিৎসা

টাইফয়েড প্রতিরোধ করার আর একটি উপায় হচ্ছে সময়ে টাইফয়েড ভ্যাক্সিন নেওয়া। সাধারণত দু’বছর বয়সের পরে এই ভ্যাক্সিন দেওয়া শুরু করা হয়। এরপর প্রতি তিন বছর অন্তর ফের এই ভ্যাক্সিন নিতে হয়। এখন অবশ্য একটি নতুন ভ্যাক্সিনও বেরিয়েছে যেটা নয় মাস বয়সের পরেই দেওয়া যায়। সময়ে ঠিকঠাক ভ্যাক্সিন নিলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here